নির্বাচন আয়োজন সংলাপ চায় দলগুলো
- আপলোড সময় : ২৮-০৮-২০২৪ ১১:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০৮-২০২৪ ১১:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে দ্রুত সংলাপ চায় রাজনৈতিক দলগুলো। বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে বলার চেষ্টা করবে। সময় ও পরিস্থিতি অনুয়ায়ী চাপ প্রয়োগ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো একইসঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। তারা মনে করছে, ধীরগতির সংস্কারে দীর্ঘ সময় লাগবে। যা সুখকর কিছু বয়ে আনবে না। এমনকি লম্বা সময় ধরে অনির্বাচিত সরকার থাকলে ফ্যাসিবাদী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সরকারের কাজে গতি আনার তাগিদ দেন তারা।
রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশে কখন নির্বাচন হবে, সেটা স¤পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শপথ নেওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিকল্প নেই। আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সরকার এখন পর্যন্ত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের কিছুই দূর করতে পারেনি। অবৈধ অস্ত্রগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। এত ধীরগতিতে কাজ করলে লম্বা সময় লাগবে। আর সংস্কারে তাদের কেমন সময় লাগবে তাও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্পষ্ট করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের ধারণা দিয়েছেন; কিন্তু তার সময় উল্লেখ করেননি। সংস্কার ছয় মাসেও করা যায়, আবার ছয় বছরেও করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ স্পষ্ট না হওয়ায় তা প্রশ্ন তৈরি করবে। বিভ্রান্তি সৃষ্ট হওয়ার আগেই সরকারকে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন। কিন্তু সংলাপের কথা বলেননি। যদিও সেপ্টেম্বরে বসার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো সরকারের যখন নির্দিষ্ট মেয়াদ না থাকে তখন নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। একসময় তাদের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে সমর্থন করছি। কিন্তু তা শর্তহীন সমর্থন নয়। জন আস্থা পর্যন্ত সেই সমর্থন থাকবে।
জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাষণে নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ না দেখে হতাশ হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভাষণে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ফখরুল নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের দাবি জানান। প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ধোঁয়াশা এখনও পরিষ্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দেবেন; সেই রোডম্যাপ আমরা তার বক্তব্যে পাইনি। ‘কবে নির্বাচন হবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে খুব দ্রুত যাবেন এবং তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি প্রধান উপদেষ্টা একটি দায়িত্বশীল ভাষণ দিয়েছেন। এটা দরকার ছিল। জাতির সামনে আশা জাগানিয়া কিছু কথা শোনার প্রয়োজন ছিল। তার বক্তব্যে এটা প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলে মনে করি। তবে এটা ঠিক, এই প্রতিধ্বনির মাধ্যমে আমার আকাক্সক্ষা পূরণ না হতে পারে, অনেকজনের আকাক্সক্ষা পূরণ না হতে পারে। দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে দেশবাসীর আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়েছে কি না। আমরা মনে করি প্রতিফলন হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার ও দেশ গঠনের যে রূপকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন, তা দ্রুত জাতির সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বস্তরে যে শ্লথগতি, তা দূর করে অবিলম্বে সরকারের কার্যক্রমকে গতিশীল করার আহ্বান জানান দলের নেতারা।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, সংলাপ একটি লম্বা প্রক্রিয়া। অনানুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ সরকার পতনের পর থেকেই শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ বাদে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এই সরকারের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার করতে সংবিধান সভার আয়োজন করতে হবে। নতুন সংবিধানের আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। আমার কাছে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী মনে হয়েছে। তিনি সব স্টেক হোল্ডারকে এড্রেস করার চেষ্টা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই সরকার দায়িত্ব নিল কেবল তো দুই সপ্তাহ হলো। সংস্কারের বড় দাবি আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বসতে হবে। এখন অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তিন থেকে ছয় মাস আগে বড় করে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এখন দেখা যাক অন্তর্বর্তী সরকার কী করে। সময় তো দিতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ